শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বঙ্গোপসাগরে বিমান ঘাঁটির বিনিময়ে সহজে ক্ষমতায় ফেরার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এক শ্বেতাঙ্গ: প্রধানমন্ত্রী প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ যখন বাংলাদেশে পৌঁছতে পারে রাইসিকে শেষ বিদায় জানাতে ইরানে হাজারো মানুষের ঢল আ’লীগের দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতা ভোগের স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না : মির্জা ফখরুল কলকাতায় আজীম হত্যা : যা জানালেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের লাগাম টেনে ধরেছেন রিশাদ সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ গ্রেপ্তার হলেন অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির ভাই রাইসির মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে বাংলাদেশ টাকা ফেরত দিয়ে খালাস পেলেন ইভ্যালির রাসেল-শামীমা

কোন পথে হাঁটছেন বাইডেন

স্বদেশ ডেস্ক: আরব বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি মোটাদাগে হিসাব করলে দাঁড়ায়- সৌদি আরবকে মিত্র বানিয়ে ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোকে বশে রাখা; বিপ্লবপরবর্তী ইরানকে নিয়ন্ত্রণ করা ও ইসরায়েলকে সুরক্ষা দেওয়া; ফিলিস্তিন ইস্যুতে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক নীতি অবলম্বন করা। এ ছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেনের মতো দেশগুলো নিয়ে এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের তেমন মাথাব্যথা লক্ষ্য করা যায় না।

যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য বিদায়ী ও তুমুল বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব ইস্যুতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? ট্রাম্পের চার বছরের শাসনামল পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে- উল্লিখিত মার্কিন নীতিগুলোই তিনি কোনো রাখঢাক ছাড়াই, বেশ খোলামেলাভাবে প্রয়োগ করেছিলেন। প্রথমত ইরান যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেই লক্ষ্যে তার প্রশাসন খড়গহস্ত ছিল, নজিরবিহীন কঠিন ও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এ ছাড়া ইরানকে বাগে রাখতে সৌদি আরবকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র জোগানের পথ অনুসরণ করেছিলেন। এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন আসলে ইসরায়েলকে সুরক্ষার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে চেয়েছিলেন। তিনি তা করেছিলেনও।

আরব বিশ্বে ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল- স্পর্শকাতর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করা। যা পূর্বের মার্কিন নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র যেখানে ফিলিস্তিন ইস্যুতে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান চায় সেখানে ট্রাম্প প্রশাসন শুধু ইসরায়েলের স্বার্থ দেখেছে। তার পরও এখানেই থেমে থাকেননি ট্রাম্প। ক্ষমতার মেয়াদের শেষপ্রান্তে এসে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনসহ কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন- যাকে ফিলিস্তিনিরা বলছে ‘পেছন থেকে ছুরিমারা’। আর ট্রাম্প বলেছেন ‘সমঝোতা চুক্তি’। আসলে তো ফিলিস্তিনি নেতাদের সঙ্গে আলোচনাই হয়নি।

এবার আসা যাক বাইডেন অধ্যায়ে। জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা নিয়েছেন দশদিন হলো। এর মধ্যে প্রথম দিনেই তিনি বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। তবে নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত বুধবার তার প্রথম প্রেস ব্রিফিংয়ে বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথমত ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন সেই প্রক্রিয়া স্থগিত করেছেন। চুক্তিটি বাতিল করেননি কিন্তু ব্লিংকেন বলেছেন বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে। ইরান বিষয়ে তিনি বলেছেন, আগে তেহরানকে পারমাণবিক চুক্তির শর্ত মেনে চলতে হবে, তার পর ওয়াশিংটনও তাই করবে।

আর ইসরায়েল নিয়ে ব্লিংকেনের ভাষ্য হলো- ‘তেলআবিবের সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারাবদ্ধ’! একই সঙ্গে এটাও বলেছেন, ওয়াশিংটন ‘আব্রাহাম চুক্তি’ মেনে চলবে! অর্থাৎ যে চুক্তি ট্রাম্প প্রশাসন করেছিল, যার মাধ্যমে আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে- সেটিই মেনে চলবে বাইডেন প্রশাসনও।

তবে ব্লিংকেনের প্রেস ব্রিফিংয়ের আগের দিন অর্থাৎ গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি সাংবাদিকদের বলেন, প্রেসিডেন্ট (জো বাইডেন) মনে করেন, ‘দ্বি-রাষ্ট্র’ সমাধানই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ।’ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সাকি বলেন, দুই দেশের সঙ্গে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র! কিন্তু সেটি কীভাবে সম্ভব?

জো বাইডেন ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ‘ঐক্যের’ কথা বলেছিলেন। তার কথায়, তাকে যারা ভোট দেননি তিনি তাদের জন্যও কাজ করতে চান। এই নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম লসঅ্যাঞ্জেলেস টাইমসে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় যাতে বলা হয়েছে- বাইডেনকে তার ‘ঐক্যের’ ধারণা খোলাসা করতে হবে। অপর সংবাদমাধ্যম দ্য হিল এ নিয়ে বলেছে, বাইডেন কীভাবে কাক্সিক্ষত ‘ঐক্য’ অর্জন করবেন? এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রসঙ্গ। কিন্তু বহির্বিশ্বেও বাইডেনকে এর চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ইসরায়েলকে নাখোশ করবেন না বাইডেন। জেরুজালেমকে ফিরিয়ে দেবেন না; এ চার বছরে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে যেসব ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করেছে সেগুলো নিয়েও ‘চুপ থাকার নীতি’ নেবেন। আর ইরান ইস্যুতেও প্রথমেই দ্বৈরথ সৃষ্টি হলো। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তি থেকে আগে বেরিয়ে গেছে সে হিসেবে ওয়াশিংটনকেই আগে চুক্তিতে ফেরা দরকার। তা না করে তেহরানকে চুক্তিতে ফেরার তাগাদা দিল ওয়াশিংটন। এ ছাড়া ইতোমধ্যে ওই চুক্তির বড় ধরনের লঙ্ঘন করেছে তেহরান। কাজেই চুক্তিতে ফেরাটা কারও জন্যই সহজ হবে না। তবে সৌদি আরবের কাছে হয়তো বাইডেন প্রশাসন অস্ত্র বিক্রি করবে না, কেননা এ বিষয়ে শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছিল ডেমোক্র্যাটরা। কিন্তু ‘সৌদি-মিত্রতা’ এত সহজে বাতিলও করতে পারবে না। সব মিলিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রেখে যাওয়া কূটকৌশল থেকে বের হতে বাইডেনকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877